সিটি ব্যাংক থেকে লোন নিতে চাচ্ছেন? এই পোস্টে সিটি ব্যাংক থেকে লোন পাওয়ার উপায় এবং লোন পেতে কী কী কাগজপত্র লাগবে তা বিস্তারিত জানতে পারবেন।

বাংলাদেশের জনপ্রিয় ব্যাংকগুলোর মাঝে সিটি ব্যাংক একটি। সিটি ব্যাংকে একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করার পর সেখানে সঞ্চয় জমা করার পাশাপাশি যে কেউ চাইলে ঋণের আবেদন করতে পারবে। সিটি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে আপনার প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারবেন।

যারা সিটি ব্যাংক থেকে লোন নিতে চাচ্ছেন কিন্তু বিস্তারিত নিয়ম জানেন না এবং কী কী কাগজপত্র লাগে তা জানতে ইচ্ছুক, তারা এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ুন। কারণ, এই পোস্টে সিটি ব্যাংক থেকে লোন পেতে কী কী লাগে, কত টাকা লোন নিতে পারবেন, কীভাবে লোন নিতে হয় এসব বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

সিটি ব্যাংক লোন নিতে কী কী লাগে

সিটি ব্যাংক লোন নিতে চাইলে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট প্রয়োজন হয়। যেকোনো ব্যাংকে লোনের আবেদন করার সময় এসব ডকুমেন্টের প্রয়োজন হয়ে থাকে। তেমনি, সিটি ব্যাংক থেকে লোন নিতে চাইলে কিছু ডকুমেন্ট লাগবে। এগুলো হচ্ছে –

  • ভোটার আইডি কার্ড/পাসপোর্ট/ড্রাইভিং লাইসেন্সের ফটোকপি
  • সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের কয়েক কপি রঙিন ছবি
  • ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না থাকলে নমিনির ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি
  • নমিনির সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের দুই কপি রঙিন ছবি
  • ঋণের আবেদন করার জন্য গ্যারান্টার এর ভোটার আইডি কার্ড ও ছবি
  • ঠিকানা যাচাই করার জন্য যেকোনো ইউটিলিটি বিলের কপি
  • ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তৈরি করলে ইনস্ট্যান্ট ডিপোজিট এর টাকা
  • লোনের আবেদন ফরম সকল তথ্য দিয়ে পূরণ করতে হবে
  • একটি সচল মোবাইল নাম্বার যেখানে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকবে
  • ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য ইনকাম সোর্সের প্রমাণপত্র
  • লোনের পরিমাণ এবং ধরনের উপর ভিত্তি করে আমানত

সিটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা থাকলে উপরোক্ত তালিকায় উল্লেখ করা কিছু ডকুমেন্ট প্রয়োজন হবেনা। তখন, লোনের আবেদন ফরম পূরণ করার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য লাগবে। এছাড়া, লোনের আবেদন ফরমটি জমা দেয়ার সময় গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টগুলোর কপি জমা দিতে হবে।

যাদের সিটি ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট নেই, তারা সিটি ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম অনুসরণ করে একটি একাউন্ট খুলে নিতে পারেন। এরপর, আলাদা করে লোনের আবেদন করে লোন নিতে পারবেন সিটি ব্যাংক থেকে। সিটি ব্যাংক থেকে লোন নেয়ার নিয়ম নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

সিটি ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায়

সিটি ব্যাংক থেকে লোন পাওয়ার জন্য উপরোক্ত প্রয়োজন কাগজপত্র নিয়ে সিটি ব্যাংকের যেকোনো একটি শাখায় যেতে হবে। এরপর, সেখানে কর্মরত কাউকে জানাতে হবে যে আপনি লোন নিতে ইচ্ছুক। তাহলে, তারা বেশ কিছু প্রশ্ন করার পর লোনের আবেদন ফরম পূরণ করে দিবে। অতঃপর, লোনের আবেদন করতে পারবেন।

সিটি ব্যাংক থেকে কত টাকা লোন নিতে চান, কোন কাজের জন্য লোন নিতে চাচ্ছেন ইত্যাদি প্রশ্ন করা হবে। এছাড়া, আপনার পেশা কী এবং কিস্তি সাপ্তাহিক নাকি মাসিক পরিশোধ করতে ইচ্ছুক, আপনার সিটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে কিনা ইত্যাদি জানতে চাওয়া হবে। প্রশ্নগুলোর সঠিক উত্তর দেয়ার পর লোনের আবেদন ফরম পূরণ করার জন্য সকল তথ্য দিবেন।

তাহলে, তারা আপনার হয়ে লোনের আবেদন ফরমটি পূরণ করে দিবে। অতঃপর, প্রয়োজনীয় কাগজপত্রগুলো জমা দেয়ার মাধ্যমে লোনের আবেদন সম্পন্ন করতে পারবেন। এরপর, অপেক্ষা করতে হবে লোনের আবেদন অনুমোদন হওয়ার জন্য। তাহলে, লোনের টাকা নিতে পারবেন।

সিটি ব্যাংক লোনের ধরণ

সিটি ব্যাংক থেকে আপনার প্রয়োজনে লোন নিতে পারবেন। বিভিন্ন ধরনের লোন দেয়া হয় সিটি ব্যাংক থেকে। কী কারণে লোন নিতে চাচ্ছেন তার উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে লোন দেয়া হয়। সিটি ব্যাংকের লোনের ধরণগুলো হচ্ছে –

  • সিটি ব্যাংক পার্সোনাল লোন
  • সিটি ব্যাংক হোম লোন
  • সিটি ব্যাংক স্যালারি লোন
  • সিটি ব্যাংক এসএমই লোন

সিটি ব্যাংক থেকে এসব লোন দেয়া হয়। এই লোনগুলো বিভিন্ন কারণে দেয়া হয়। এছাড়া, প্রতিটি লোনের পরিমাণ এবং মেয়াদ সহ শর্ত ভিন্ন থাকে। নিম্নে এসব নিয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

সিটি ব্যাংক পার্সোনাল লোন

পার্সোনাল বিভিন্ন কাজে অর্থের প্রয়োজন হলে সিটি ব্যাংক থেকে পার্সোনাল লোন নিতে পারেন। এটি হতে পারে আপনার ব্যবসায়ের জন্য বা নতুন ব্যবসার উদ্যোগ নেয়ার জন্য। সিটি ব্যাংক থেকে পার্সোনাল লোন নিতে সিটি ব্যাংকের যেকোনো শাখায় যেতে হবে।

এরপর, তাদেরকে জানাতে হবে যে আপনি সিটি ব্যাংকে একটি পার্সোনাল লোনের আবেদন করতে চাচ্ছেন। তাহলে, আপনি কত টাকা লোন নিতে ইচ্ছুক এবং আপনার সিটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে কিনা সহ বেশ কিছু প্রশ্ন করা হবে। অতঃপর, পার্সোনাল লোনেন আবেদন ফরম দেয়া হবে।

লোনের আবেদন ফরম পূরণ করে সাথে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে। এরপর, আবেদন ফরম জমা দিয়ে অপেক্ষা করতে হবে। লোনের আবেদন অনুমোদন হলে আপনাকে এসএমএস করে বা কল করে জানিয়ে দেয়া হবে। এই পদ্ধতিতে সিটি ব্যাংক থেকে পার্সোনাল লোন নিতে পারবেন।

সিটি ব্যাংক হোম লোন

বাসা-বাড়ি তৈরি করতে বা ক্রয় করতে লোন নেয়ার প্রয়োজন পড়ে। সিটি ব্যাংক হোম লোন নিয়ে নতুন বাসা-বাড়ি তৈরি করতে পারবেন বা ক্রয় করতে পারবেন। সিটি ব্যাংক হোম লোন নেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সাথে নিয়ে যেকোনো শাখায় যেতে হবে

এরপর, তাদেরকে জানাতে হবে যে আপনি সিটি ব্যাংক থেকে হোম লোন নিতে ইচ্ছুক। এরপর, লোনের আবেদন ফরম নিয়ে সকল তথ্য দিয়ে পূরণ করতে হবে। কত টাকা লোন নিতে চান তা উল্লেখ করতে হবে। লোনের গ্যারান্টার এর ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি এবং ছবি দিতে হবে।

এরপর, লোনের আবেদন ফরমটি পূরণ করে জমা দিতে হবে। সঙ্গে, প্রয়োজনীয় কাগজপত্রগুলো জমা দিতে হবে। অতঃপর, লোনের আবেদন অনুমোদন হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। লোন অনুমোদন হয়ে গেলে লোনের টাকা আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে দিয়ে দেয়া হবে।

সিটি ব্যাংক স্যালারি লোন

সিটি ব্যাংক থেকে স্যালারি লোন নিতে চাইলে সিটি ব্যাংকে আপনার স্যালারি অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে বা অন্য ব্যাংকে স্যালারি অ্যাকাউন্ট থাকলে সেটির তথ্য দিয়ে সিটি ব্যাংকে স্যালারি লোনের জন্য আবেদন করতে হবে।

সিটি ব্যাংকের যেকোনো একটি শাখায় গিয়ে তাদেরকে জানাতে হবে যে আপনি স্যালারি লোন নিতে চান। তাহলে, আপনার স্যালারি অ্যাকাউন্টের তথ্য নেয়ার পর তারা যাচাই করে দেখবে। অতঃপর, আপনি কত টাকা লোন নিতে চান তা জানতে চাইবে।

স্যালারি লোন নেয়ার আবেদন ফরম পূরণ করে দিবে তারা। এজন্য, তাদেরকে সকল তথ্য প্রদান করতে হবে। অতঃপর, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে লোনের আবেদন ফরমের সাথে। তাহলে, লোনের জন্য আবেদন সম্পন্ন করতে পারবেন।

সিটি ব্যাংক এসএমই লোন

নতুন বা পুরাতন উদ্যোক্তাদের যেকোনো প্রকল্প শুরু করার জন্য টাকার প্রয়োজন হয়। তারা চাইলে সিটি ব্যাংক থেকে এসএমই লোন নিতে পারেন। সিটি ব্যাংক থেকে এসএমই লোন নেয়ার জন্য সিটি ব্যাংকের যেকোনো শাখায় যেতে হবে। এরপর, তাদেরকে জানাতে হবে যে আপনি সিটি ব্যাংক থেকে এসএমই লোন নিতে ইচ্ছুক।

অতঃপর, তারা বেশ কিছু তথ্য জেনে নিবে। এছাড়া, City Bank SME Loan এর ফরম পূরণ করে দিবে। এজন্য, তাদেরকে সকল তথ্য প্রদান করতে হবে। তাহলে, তারা লোনের আবেদন ফরম পূরণ করে সাবমিট করতে পারবে। আবেদন ফরম পূরণ করা শেষ হলে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে।

এভাবে, সিটি ব্যাংক থেকে এসএমই লোনের জন্য আবেদন করতে পারবেন। আবেদন করার পর ব্যাংক থেকে আপনার লোন আবেদন অনুমোদন করা হলে লোনের টাকা আপনার অ্যাকাউন্টে দেয়া হবে।

বিকাশের মাধ্যমে সিটি ব্যাংক থেকে লোন

যাদের বিকাশ অ্যাকাউন্টে বেশি পরিমাণে লেনদেন করা হয়, তারা চাইলে বিকাশ অ্যাপের ভিতর থেকে সিটি ব্যাংক থেকে লোন নিতে পারবেন। বিকাশ অ্যাপ এবং সিটি ব্যাংক মিলে লোন দেয়া হয়। বিকাশ অ্যাপ থেকে মূলত সিটি ব্যাংকের লোন দেয়া হয়।

তাই, আপনি চাইলে সিটি ব্যাংকে লোনের আবেদন না করে বিকাশ থেকে লোন নিতে পারবেন। এজন্য, বিকাশ অ্যাপ ব্যবহার করে বেশি বেশি লেনদেন করতে হবে। অতঃপর, বিকাশ অ্যাপের ভিতরে থাকা লোন অপশন থেকে সিটি ব্যাংকের লোন নিতে পারবেন।

লেনদেনের পরিমাণের উপর ভিত্তি করে ভিন্ন পরিমাণ টাকার লোন দেয়া হয়। আপনি লোন পাবেন কিনা জানতে বিকাশ অ্যাপ ওপেন করে লোন অপশন চেক করুন।

সারকথা

সিটি ব্যাংক থেকে লোন নিতে কী কী লাগে, সিটি ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায় এবং সিটি ব্যাংকের বিভিন্ন ধরনের লোন নিয়ে বিস্তারিত তথ্য শেয়ার করা হয়েছে এই পোস্টে। যারা লোন নিতে চাচ্ছেন, তাদের জন্য এই পোস্টটি অনেক সহায়ক হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *